গর্ভাবস্থায় আপনি কি কি পুষ্টিকর খাবার খাবেন?

গর্ভাবস্থায় কি কি পুষ্টিকর খাবার খাবেন:-

গর্ভাবস্থায় একজন নারী মা হবার আনন্দে যেমন বিভোর থাকেন ঠিক তেমনি নানান বিপদের কথা ভেবে থাকেন চিন্তিত।গর্ভধারণ মানে কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।তাই নিরাপদে মা হবার জন্য গর্ভে সন্তানের আগমন নিশ্চিত হওয়া মাত্রই গর্ভকালীন পরিচর্যা শুরু করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বজায় রাখা খুবই জরুরি।এই সময় আপনার শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টি ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন।প্রকৃতপক্ষে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসের সময় আপনার প্রতিদিন 350 থেকে 500 অতিরিক্ত ক্যালরি প্রয়োজন হতে পারে। খাদ্যে পুষ্টির অভাবে একটি শিশুর বিকাশ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারে।বাজে খাদ্যাভাসের জন্য অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এবং জন্ম জটিলতা হতে পারে যা আপনার এবং আপনার শিশুর জীবনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।তাই সুস্থ, পুষ্টিকর খাবারের চয়ন আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন সময়গুলোতে একটু বেশি খাদ্য গ্রহনের চাহিদা অনুভব করে থাকলেওঅধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা থাকেন খাদ্য বিমুখ।গর্ভাবস্থা একটি আশ্চর্য সময় এ সময় প্রত্যেকটি মায়ের অনুভূতি থাকে ভিন্ন।

গর্ভাবস্থায় মায়ের যে সমস্ত খাবার গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো..


ডিম:-

গর্ভাবস্থা আর ডিম; এই দুইটি জিনিস এর অবস্থান বিপরীতমুখী।মর্নিং সিকনেস, সব সময় বমি ভাব ইত্যাদির কারণে এ সময় ডিম এড়িয়ে যেতে চান অনেকেই।ডিমের মধ্যে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, আয়রন এবং কলিন।ডিম সাধারণত লো ক্যালরি উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের উৎস।তবে গর্ভাবস্থায় এটি  DHA না নামক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।গর্ভাবস্থায় মায়ের নবজাতক শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের গঠনের ডিম যথেষ্ট অবদান রাখে।


দুগ্ধজাত খাদ্য:-

গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম থাকা জরুরি।দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য থেকে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব।এছাড়া দুগ্ধজাত খাবারে উপস্থিত ভিটামিন ডি ভিটামিন এ এবং প্রোটিন নবজাতকের শারীরিক বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

পালং শাক:-

পালং শাকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী মোটামুটি সব ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান ভিটামিন এ ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি খাদ্য ও আয়রন ফলিক এসিড এবং উচ্চমাত্রার এন্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ইত্যাদি শিশুকে পরবর্তীতে বিভিন্ন মারাত্মক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।গর্ভাবস্থায় আয়রন গ্রহণ খুবই জরুরি কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের অ্যানিমিয়ায় ভুগতে দেখা যায়।আর পালংশাকে উপস্থিত আয়রন গর্ভবতী মাকে এনিমিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।


গাজর:-

গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ থাকা প্রয়োজন।এটি নবজাতকের ত্বক, চোখ, দাঁত এবং হাড়ের সঠিক করে সাহায্য করে।গাজরে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে রক্ষা করে।

বাদাম:-

গর্ভাবস্থায় কিছুক্ষণ পর পর ভাজা পোড়া খাওয়ার প্রবণতা থাকে।ক্ষতিকর ভাজা-পোড়া না খেয়ে গর্ভবতী মায়েরা বাদাম খেতে পারেন।বাদামে উপস্থিত মিনারেল, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন, কপার, সেলেনিয়াম এবং জিংক গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর মিনারেল এর মাত্রা ঠিক রাখে সেইসাথে ওমেগা থ্রি এর ফ্যাট শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে।

আম:-

পটাসিয়াম ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এ তে ভরপুর গর্ভাবস্থায় মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও রক্তচাপ ঠিক রাখে।এছাড়াও এ সময় আমাদের পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিক রাখতে এবং মর্নিং সিকনেস কমাতে আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পপকর্ন:-

অবাক করা হলেও সত্যি যে পপকর্ন ভ গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখে।পপকর্ন এ প্রচুর লবণ ও মাখন থাকে।এতে উপস্থিত খাদ্য আঁশ ভিটামিন ই সেলেনিয়াম এবং কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান অনাগত শিশুর কোষ প্রাচীর গঠনে সহায়তা করে।

দই:

দই এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি এবং জিংকের পরিমাণ লক্ষ্য করা যায় যা নবজাতকের হাড় এবং দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চর্বিহীন মাংস:-

চর্বিহীন মাংস প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং  আয়রনের একটি দারুন সংমিশ্রণ।গর্ভবতী অবস্থায় থাকাকালীন মায়েদের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রনের প্রয়োজন হয় কারণ এই সময় দেহে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লোহিত কণিকা ত্বরান্বিত করার জন্য আয়রনের প্রচুর প্রয়োজন হয় যা এই চর্বিহীন মাংস থেকে পাওয়া যায়।তাছাড়া নবজাতকের মাংসপেশি গঠনের জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এর দরকার হয় তা এই চর্বিহীন মাংস থেকে পাওয়া যায়।

মটরশুটি এবং ডাল:-

মটরশুটি ও ডাল প্রোটিন ও আয়রনের এক দারুণ উৎস।তাছাড়াও এর মধ্যে ফোলেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম এবং জিংক এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।


কমলালেবুর রস:-

অরেঞ্জ জুসের মধ্যে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ফোলেট এবং বিনাইন বেশি পরিমাণে থাকে যা প্রেগনেন্সির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।ভিটামিন-সি মায়ের আয়রনের চাহিদা এবং নবজাতকের দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়তা করে এছাড়াও পটাশিয়াম নবজাতকের  মাংসপেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

জল:-

গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়ের দেহে রক্তের পরিমাণ ১.৫ লিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে তাই এ সময়ে সঠিক পরিমাণে জল পান না করার ফলে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে।যাহার ফলে ভ্রুণটি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের ক্ষতিসাধন করতে পারে।যখনই মায়েদের দেহে অল্প ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে শুরু করে তখন মাথাধরা, দুশ্চিন্তা,ক্লান্তি, খারাপ মেজাজ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।তাছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের মূত্রনালীতে ইনফেকশন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় কিন্তু আপনি যদি বেশি পরিমাণে জল পান করেন তাহলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ