প্রেগনেন্সি নারীর জীবনে অনেক কাঙ্ক্ষিত ও অনেক আনন্দের একটি বিষয়।

ভূমিকা: 
গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর জন্য অনেক কাঙ্ক্ষিত ও অনেক আনন্দের একটি বিষয়।মাতৃত্ব প্রতিটি মেয়ের জীবনে নতুন মাইলফলক যোগ করে। প্রত্যেকটি মহিলার জীবনেই প্রেগনেন্সি একটি বিশেষ সময় কাল।কনসিভ করার আগে মানুষ অনেক কিছু পরিকল্পনা করে থাকে এবং আরো অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে এর সাথে‌। প্রেগনেন্সি বলতে আপনি এই পৃথিবীতে একটি নতুন প্রাণ কে নিয়ে আসতে প্রস্তুত সেটা বোঝাই। আপনি কি প্রস্তুত এই বিশাল দায়িত্ব নিতে? এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে শারীরিক, মানসিক,সামাজিক ও আর্থিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে।এই সময় নারীর সাবধানতা অবলম্বন খুবই জরুরী।এই সময় নারীকে তার জীবনের পদক্ষেপ খুব বুঝে শুনে নিতে হয়।
গর্ভধারণের সঠিক সময়কাল:- 
বিশেষজ্ঞদের মতে বেশিরভাগ মায়েদের ক্ষেত্রেই মাসিক শুরুর 12 থেকে 14 দিনের মধ্যেই ডিম্বানু উৎপন্ন হয়।তাই আপনার যদি গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকে তবে এই সময়ে বা এই সময়ের কিছু আগে আপনার সঙ্গীর সাথে শারীরিক মিলন করুন।

গর্ভসঞ্চার:-


গর্ভধারণের সময় গণনা সাধারণত শুরু হয় মাসিকের প্রথম দিন থেকে।এই সময় এর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সাধারণত গর্ভসঞ্চার হয়ে থাকে।যেহেতু গর্ভসঞ্চারের নির্দিষ্ট সময় নির্ণয় করা অসম্ভবতাই বিশেষজ্ঞরা শেষ মাসিকের প্রথম দিন হতেপরবর্তী 40 সপ্তাহ কে গর্ভধারণের সময় হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।এই হিসেবেই প্রসবের দিন গণনা করা হয়।

প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সময়টিতে আপনি ঠিক গর্ভবতী নন,কারণ গর্ভসঞ্চারের ব্যাপারটি আপনার মাসিক শেষের দুই সপ্তাহ পর ঘটে থাকে।প্রতিবার মাসিকের পরেই আপনার শরীর অনেক জটিল হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়।এটা হয় শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করতে।তাই মাসিকের প্রথম দিনকেই গর্ভধারণের প্রথম দিন হিসাবে ধরা হয়।
প্রথম মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও আপনার শরীরে গর্ভসঞ্চার হয়নি।তবে এই সপ্তাহেই আপনার ডিম্বাণু উৎপন্ন হবে যা আপনার সঙ্গীর শুক্রানুর সাথে মিলিত হবে এবং প্রাণের সঞ্চার করবে।এই ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে জরায়ুর দেওয়ালে বসবে।সেখানে ধীরে ধীরে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে মানবসন্তানের আদল পাবে।আপনি হয়তো কিছুই টের পাচ্ছেন না, কিন্তুগর্ভস্থ ভ্রূণকোষটি ইতিমধ্যেই ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা ঠিক হয়ে গেছে।শুক্রাণু ওয়াই ক্রোমোসোম ধারণ করলে আপনার সন্তান হবে ছেলে আর এক্স ক্রোমোজোম হলে হবে মেয়ে।

ভ্রুণের জন্য এই দ্বিতীয় সপ্তাহটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।এ পর্যায়ে এটি দুইভাগে ভাগ হতে পারেভিতরে থাকে ভ্রুণ এবং বাইরে একটি আবরণ যাওয়ার নাম ইয়ক স্যাক,মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটিকে বলা হয় এমনিওটিক গহবর।গর্ভফুল পুরোপুরি গঠন না হওয়া পর্যন্ত  ইয়ক স্যাক বাচ্চার শরীরে পুষ্টির যোগান দেয় এবং তাকে সুরক্ষিত রাখে।এই পর্বে গর্ভফুল মাত্র তৈরি হওয়া শুরু করেছে এটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে।গর্ভের দুসপ্তাহে নাভিরজ্জুও গঠিত হতে শুরু করে এবং একটু-আধটু কাজ করে।

নবজাতকের গঠন:- 


প্রথম মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আপনাকে অফিশিয়ালি গর্ভবতী বলা যায়।এ সময় বংশগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান জিনগত  গঠন সম্পূর্ণ  হয় এবং শিশুর লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।গর্ভধারণ শুরুর 3 দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণু খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে বহুকোষে পরিণত হয়।তা ফ্যালোপিয়ান নালি দিয়ে জরায়ুতে গিয়ে পৌঁছে এবং জরায়ুগাত্রে সংযুক্ত হয়।এ সময় ভ্রুণের পুষ্টি জোগানোর জন্য জরায়ুর অন্তরাচ্ছদক অঙ্গ গর্ভফুলের গঠন শুরু হয়। 

এই সময়ে আপনার বাচ্চাটির আকার ছোট্ট একটা বলের সমান।এই ছোট্ট বল যাকে কেন্দ্র করে কোষ বিভাজন শুরু হয়েছে, তার চারপাশে এমনিওটিক ফ্লাইড জমা হওয়া শুরু হয়েছে।এটা একসময় এমনিওটিক স্যাকে পরিণত হবে।এটা একটা জলের থলির মতো যার ভিতর শিশুটি বড় হতে থাকবে।

প্রথম মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশুর আকারকে তুলনা করা যেতে পারে একটা পোস্তাদানার সাথে।নিজের প্রয়োজনে এবং আপনার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শিশুটি দিন-রাত তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকশিত করে যাচ্ছে।আপনার শিশুটি যে থলির ভিতর এক ধরনের তরলের মধ্যে বড় হচ্ছে,সেই থলিটি আরো পুরু হয়ে ভিতরের তরল আরো বৃদ্ধি পেয়ে ভ্রুণটিকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।

প্রথম মাসের চতুর্থ সপ্তাহে আপনি যদি জানতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী তাহলে আপনি অনেকের চাইতে ভাগ্যবতী।কারণ অনেকেই মাত্র চার সপ্তাহে গর্ভধারনের সুসংবাদটি পান না।এ পর্যায়ে শিশুর অঙ্গসংস্থানের উন্নয়ন শুরু হয় যা অবশেষে মুখমণ্ডল ঘাড় ও গলা গঠন করে।হৃদপিণ্ড এবং রক্তবাহী শিরা ও ধমনীর উন্নয়নে চলতে থাকে।ফুসফুস পাকস্থলী ও যকৃতের উন্নয়ন ও শুরু হয়।এই সময় আপনার ভ্রুণের সাইজ একটি পপি বীজের সমান থাকে।এর দুটো স্তর থাকে যা থেকে তার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকশিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ